নিজস্ব প্রতিবেদকঃ নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার (২৩ জুলাই) বেলা ১১টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয় পাবনার একটি দল অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযানের নেতৃত্ব দেন সহকারি পরিচালক সাধন চন্দ্র সূত্রধর। অভিযান টিমের অন্য সদস্যরা হলেন, উপসহকারি পরিচালক মমিন উদ্দিন, সহকারি পরিদর্শক ইসতিয়াক আহমেদ।
অভিযানকালে বর্হিবিভাগে রোগী দেখা ও ব্যবস্থাপত্র লেখায় অনিয়ম, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে খাবার তৈরি ও পরিমানে কম দেওয়া, রোগীদের বিছানার চাদর ও বালিশ সরবরাহ না করা এবং হাসপাতালের অভ্যন্তরে ও রোগীদের ব্যবহারের টয়লেট নোংরা ও অপরিষ্কারসহ বেশ কিছু অসঙ্গতি পাওয়া যায়।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয় পাবনার সহকারি পরিচালক সাধন চন্দ্র সূত্রধর বলেন, আমরা প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বর্হিবিভাগে অভিযানে গিয়ে দেখি সেখানে উপসহকারি কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার কর্তৃক রোগী দেখা হচ্ছে। রোগীকে কি রোগের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে তা ব্যবস্থাপত্রে লেখা নাই। এ বিষয়ে যিনি ব্যবস্থাপত্র লিখেছেন তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। এরপর আমরা হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডে গিয়ে রোগীদের সাথে কথা বলে জানতে পারি তাদেরকে বিছানার চাদর ও বালিশ সরবরাহ করা হয় না। সেইসাথে রোগীদের ব্যবহারের টয়লেটটি অত্যন্ত নোংরা এবং অপরিষ্কার দূর্গন্ধময়, যা ব্যবহার অনুপযোগী। অনুসন্ধানে এসবের সত্যতা পাওয়া যায়। এ সময় আমরা দেখতে পাই একটি ফ্যান বন্ধ আছে। এটি রোগীরা ইনচার্জকে অবহিত করে। ইনচার্জ কর্তৃপক্ষকে জানালেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। যেখানে রোগীদের জন্য খাবার প্রস্তুত করা হয় সেই স্থানটিও খুবই অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় ছিল। পাশাপাশি যে পরিমাণ খাবার দেওয়ার কথা তার থেকে কম পরিমাণে মাংস, সবজি ও ডাল দেওয়া হচ্ছিল।
দুদকের সহকারি পরিচালক সাধন চন্দ্র সূত্রধর আরও বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ ছিল বর্হিবিভাগে আসা রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বেসরকারি হাসপাতাল- ক্লিনিকে পাঠানো হয়। যেগুলো হাসপাতালে করা সম্ভব সেসব পরীক্ষা নিরীক্ষার রিপোর্টও ক্লিনিকগুলো থেকে করানো হয়। হাসপাতালে এক্স-রে করার জন্য সকল যন্ত্রপাতি থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র ফিল্ম নাই, এই অজুহাতে এক্স-রে করা হয় না। এক্স-রে ফিল্ম কেনার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণও করেনি।
এছাড়াও বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য হাসপাতালে সরবরাহকৃত যন্ত্রপাতির তালিকা আমারা চেয়েছিলাম কর্তৃপক্ষ তা সরবরাহ করতে পারেননি। যদি নতুন যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয় তাহলে পুরাতন যে যন্ত্রপাতি তারা কি করেছে নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করেছে কিনা এ ধরনের কোন তথ্য সরবরাহ করতে পারেননি।
হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে রোগীদের সেবা প্রদান করা হয় কিনা সেই অ্যাম্বুলেন্সের তথ্য আমরা চেয়েছি। কি সেবাটা তারা দেয় এবং রোগীদের কাছ থেকে কি পরিমাণ টাকা নেয় সেটির কোন রশিদ আছে কিনা বিস্তারিত তথ্য আমরা চেয়েছি। কিন্তু তারা তাৎক্ষণিকভাবে তা দেখাতে পারেনি। পরে সরবরাহ করবেন বলে জানিয়েছেন।
দুদক কর্মকর্তা জানান, আমরা যেসব অসঙ্গতি পেয়েছি সেসবের একটি প্রতিবেদন দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে প্রেরণ করব। প্রতিবেদনের আলোকে প্রধান কার্যালয় থেকে যে নির্দেশনা আমাদেরকে দিবেন পরবর্তীতে সেই নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা হবে।